ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে : ই-পাসপোর্ট ভ্রমণকারীদের জন্য এক দারুণ সুযোগ। এটি শুধু আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, বরং ভ্রমণের নিরাপত্তা ও সেবার মান অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকেই জানতে চান, ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? ই-পাসপোর্ট তৈরির জন্য কোন কোন কাগজপত্র লাগবে, আবেদন প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন করবেন এবং এর খরচ কেমন হবে—এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলে কাজ অনেক সহজ হয়। আজকের লেখায় আমরা এসব বিষয় সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করব, যাতে আপনিও ঝামেলা ছাড়াই ই-পাসপোর্ট করতে পারেন।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৪?
২০২৪ সালে ই-পাসপোর্টের ফি নির্ধারিত হয়েছে পাসপোর্টের ধরন, পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং মেয়াদের উপর ভিত্তি করে। নিচে এর বিস্তারিত দেওয়া হলো:
৫ বছরের মেয়াদী ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
১. ৩৬ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:
- সাধারণ প্রক্রিয়ায়: ৩,৫০০ টাকা।
- জরুরি প্রক্রিয়ায়: ৪,৫০০ টাকা।
২. ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:
- সাধারণ প্রক্রিয়ায়: ৫,০০০ টাকা।
- জরুরি প্রক্রিয়ায়: ৬,০০০ টাকা।
১০ বছরের মেয়াদী ই-পাসপোর্ট
১. ৩৬ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:
- সাধারণ প্রক্রিয়ায়: ৪,৫০০ টাকা।
- জরুরি প্রক্রিয়ায়: ৫,৫০০ টাকা।
২. ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:
- সাধারণ প্রক্রিয়ায়: ৬,০০০ টাকা।
- জরুরি প্রক্রিয়ায়: ৭,০০০ টাকা।
ফি জমা দেওয়ার পদ্ধতি
ই-পাসপোর্টের ফি ই-পাসপোর্ট পোর্টাল থেকে বা নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেওয়া যায়।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও তথ্য প্রদান করতে হয়। নিচে এর তালিকা দেওয়া হলো:
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): আসল এবং ফটোকপি।
২. জন্মনিবন্ধন সনদ: এটি ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য প্রয়োজন।
৩. বৈবাহিক অবস্থা প্রমাণের নথি: বিবাহিত হলে বিবাহ নিবন্ধন সনদ এবং স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি।
৪. বিদ্যমান পাসপোর্ট (যদি থাকে): আগের পাসপোর্টের ফটোকপি।
৫. অভিভাবকের তথ্য: ১৮ বছরের নিচে হলে অভিভাবকের নাম, পাসপোর্ট বা এনআইডি নম্বর।
৬. ছবি এবং বায়োমেট্রিক তথ্য: পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি নেওয়া হবে।
পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কি কি কাগজ লাগে?
নতুন ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে কিছু নির্দিষ্ট নথি এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র:
- এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদ।
- আগের পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে)।
- আবেদন ফর্ম, যা অনলাইনে পাওয়া যায়।
- নির্ধারিত ফি জমার রশিদ।
আবেদন প্রক্রিয়া:
১. অনলাইনে ই-পাসপোর্ট পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করুন।
২. প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে আবেদন ফর্ম সাবমিট করুন।
৩. নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক এবং ছবি তুলুন।
৪. আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে SMS বা ইমেইলের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয় ।
ই-পাসপোর্ট করতে বয়স কত লাগে?
ই-পাসপোর্ট করতে নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই। তবে,
- ১৮ বছরের নিচে: জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।
- ১৮ বছরের বেশি: এনআইডি থাকা বাধ্যতামূলক।
শিশুদের পাসপোর্ট আবেদন করতে হলে বাবা-মায়ের তথ্য, যেমন এনআইডি, পাসপোর্ট নম্বর, এবং জন্মসনদ দিতে হয়।
বিবাহিতদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
বিবাহিত ব্যক্তিদের ই-পাসপোর্ট করতে কিছু অতিরিক্ত নথি প্রয়োজন হয়। এগুলো হলো:
১. বিবাহ নিবন্ধন সনদ।
২. স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট।
৩. বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে থাকলে ডিভোর্স সনদ।
১০ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
দীর্ঘ মেয়াদী পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজন:
- উপরের সব নথি।
- দীর্ঘ মেয়াদের ফি।
- ১০ বছরের জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে এবং কি কি লাগে?
ই-পাসপোর্ট করতে চাইলে প্রয়োজনীয় নথি, সঠিক ফি এবং আবেদন ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার সুবিধা:
- দ্রুত আবেদন ও সংগ্রহের সুবিধা।
- উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
- আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন নথি।
ই-পাসপোর্ট বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশে এটি সহজে প্রাপ্য। সঠিক তথ্য ও নির্দেশিকা অনুসরণ করলে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত হবে। ই-পাসপোর্ট পেতে দেরি না করে আজই আবেদন করুন।
ই-পাসপোর্ট সম্পর্কিত প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
১. ই-পাসপোর্ট কি?
ই-পাসপোর্ট হলো একটি আধুনিক পাসপোর্ট যার মধ্যে ইলেকট্রনিক চিপ থাকে। এই চিপে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত তথ্য এবং বায়োমেট্রিক ডেটা সংরক্ষিত থাকে। এটি ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং দ্রুত প্রসেসিংয়ে সহায়তা করে।
২. ই-পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
ই-পাসপোর্টের ফি নির্ভর করে এর মেয়াদ, পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং প্রক্রিয়ার উপর।
- ৫ বছরের জন্য ৩৬ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:
- সাধারণ: ৩,৫০০ টাকা।
- জরুরি: ৪,৫০০ টাকা।
- ১০ বছরের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট:
- সাধারণ: ৬,০০০ টাকা।
- জরুরি: ৭,০০০ টাকা।
৩. ই-পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (১৮ বছরের নিচে)।
- আগের পাসপোর্ট (যদি থাকে)।
- ফি জমার রশিদ।
- বিবাহিত হলে বিবাহ নিবন্ধন সনদ।
- ১৮ বছরের কম হলে অভিভাবকের তথ্য।
৪. ই-পাসপোর্টের জন্য কি ফর্ম পূরণ করতে হবে?
হ্যাঁ, ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হয়। এটি ই-পাসপোর্টের ওয়েবসাইট (epassport.gov.bd) থেকে করা যায়।
৫. ই-পাসপোর্ট করতে কত সময় লাগে?
- সাধারণ প্রক্রিয়ায়: ২১ কার্যদিবস।
- জরুরি প্রক্রিয়ায়: ৭-১০ কার্যদিবস।
৬. ই-পাসপোর্টের মেয়াদ কত?
ই-পাসপোর্ট ৫ বা ১০ বছরের জন্য করা যায়।
৭. বিবাহিতদের জন্য পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
- বিবাহ নিবন্ধন সনদ।
- স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট।
- যদি বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে থাকে, তাহলে ডিভোর্স সনদ।
৮. শিশুদের ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
- শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ।
- বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র।
- বাবা-মায়ের পাসপোর্ট থাকলে তার ফটোকপি।
৯. ১০ বছরের ই-পাসপোর্ট করতে কি শর্ত আছে?
১০ বছরের মেয়াদী পাসপোর্ট করতে আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে।
১০. ই-পাসপোর্ট করতে কোথায় যেতে হয়?
ই-পাসপোর্টের জন্য আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। তবে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করে নির্ধারিত তারিখে বায়োমেট্রিক এবং ছবি তুলতে যেতে হবে।
১১. পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কি করতে হবে?
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে এবং সেই জিডি রিপোর্টসহ নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।
১২. পাসপোর্টের জন্য ফি কোথায় জমা দিতে হয়?
ফি ই-পাসপোর্ট পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে বা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিতে হয়।
১৩. ই-পাসপোর্টের সুবিধা কি?
- উন্নত নিরাপত্তা।
- ভ্রমণে দ্রুত প্রসেসিং।
- আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।
- চিপ-নির্ভর প্রযুক্তি।
১৪. কিভাবে ই-পাসপোর্ট চেক করা যায়?
ই-পাসপোর্টের আবেদন বা প্রস্তুতির স্ট্যাটাস epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে লগইন করে চেক করা যায়।
১৫. কতদিন আগে পাসপোর্ট নবায়ন করা উচিত?
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৬ মাস আগে নবায়ন করা উচিত।